৭টি ইকমার্স মার্কেটিং স্ট্রাটেজি আপনার অনলাইন শপের জন্য
আপনার নতুন ইকমার্স বিজনেসের মার্কেটিং এর জন্য প্রয়োজন কঠিন সংকল্প এবং সঠিক ইকমার্স মার্কেটিং স্ট্রাটেজি।
ইকমার্স মার্কেটিং এর সফলতার জন্য আপনাকে সব মার্কেটিং মেথডগুলো টেস্ট করতে হবে এবং রেজাল্টের উপর নির্ভর করে এ্যাড ক্যাম্পেইন অপ্টিমাইজ করতে হবে।
এর পাশাপাশি প্রোডাক্ট বা ল্যান্ডিং পেজগুলো অধিক কনভার্শনের জন্য অপ্টিমাইজ করা, এসইও স্ট্রাটেজিকে সফলভাবে প্রয়োগ করার জন্য ভালো কন্টেন্ট তৈরি করতে হবে।
এছাড়াও যে মার্কেটিং ট্যাক্টিক’স খুবই ভালো কাজ করবে সেখানে আরও বেশি বাজেট রাখা এবং প্রতিটি ক্যাম্পেইন থেকে যেন ভালো রিটার্ন অব ইনভেস্টমেন্ট আসে তা মনিটর করা।
উপরে বর্নিত প্রত্যেকটি বিষয়ের উপর নজর দিতে হবে সফল মার্কেটিং এর জন্য।
আপনি যদি একটি অনলাইন স্টোরের ওনার হন, তবে আপনার জন্য সবচেয়ে ভাল খবর হল সাম্প্রতিক ইকমার্স পরিসংখ্যান গুলো সব আপনারই পক্ষে।
- ইকমার্সের মাধ্যমে কেনাকাটা ২০২২ সাল নাগাদ $৫.৫ ট্রিলিয়ন হবে বলে প্রেডিক্ট করা হয়েছে এবং যা নেক্সট বছরে আরও ২৩% বৃদ্ধি পাবে।
- এবং আমাদের দৈনন্দিন কেনাকাটার শতকরা ৪০টি শুধুমাত্র অনলাইন চ্যানেল ব্যবহার করে করা হবে৷
অনলাইন শপিং এর চাহিদা ভীষণ দ্রুততার সাথে বেড়েই চলছে যা আমরা আমাদের চারপাশে (বিশেষ করে ফেসবুকে লাইভে সেল করার হিড়িক দেখেই বোঝা যায়) তাকালেই পরিষ্কার।
কিন্তু এর জন্য যেনতেন প্রকারের মার্কেটিং করলে হবে না, আপনার ডিজিটাল মার্কেটিং স্ট্রাটেজি হতে হবে টপ-ক্লাসের। এর পাশাপাশি আপনার কনভার্শন ফানেল এবং চেক-আউট প্রসেসকে ইউজার ফ্রেন্ডলি করতে হবে।
ইকমার্স মার্কেটিং করার সময় আপনি যে প্রতিটি স্ট্রাটেজি সফলভাবে সম্পাদন করতে পারবেন তা কিন্তু নয়।
তবে আপনার পটেনশিয়াল কাস্টোমারদের সেলস ফানেলে সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে, সকল প্ল্যাটফর্মে ধারাবাহিক মার্কেটিং করার মাধ্যমে, আপনি বিশাল পরিমান রেভিনিউ আর্ন করতে পারবেন।
ইকমার্স মার্কেটিং কি?
ইকমার্স মার্কেটিং হচ্ছে আপনার অনলাইন শপকে ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিভিন্ন মেথড ব্যবহার করে প্রোমোট করা।
সেটা ইনবাউন্ট এ্যাডভার্টাইজিং, ওর্গানিক এসইও কিংবা অন্যান্য মার্কেটিং ট্যাক্টিক্স, যার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ওয়েবসাইট এর ট্রাফিক বৃদ্ধি করা, ব্রান্ড ট্রাস্ট তৈরি করার মাধ্যমে সেলস জেনারেইট করা।
ইকমার্স মার্কেটিং ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রায় সকল সেকশন ব্যবহার করে ওয়েবসাইটে ট্র্যাফিক নিয়ে এসে তাদেরকে কাস্টোমারে পরিণত করা।
এজন্য তারা – সোশ্যাল মিডিয়া, সার্চ ইঞ্জিন, ইমেইল, কন্টেন্ট সহ অন্য সকল মার্কেটিং মেথড ইমপ্লিমেন্ট করে।
আপনাকে ইফেক্টিভ ইকমার্স মার্কেটিং স্ট্রাটেজির সঠিক ধারণা দেবার জন্য নিম্নে আমি কিছু কমন মার্কেটিং চ্যানেল নিয়ে আলোচনা করবো যার মাধ্যমে আপনি প্রচুর সেলস করতে পারবেন আপনার অনলাইন স্টোর থেকে।
সেরা ইকমার্স মার্কেটিং স্ট্রাটেজি সমূহ কি কি?
ইকমার্স মার্কেটিং এর জন্য দরকার মাল্টি-চ্যানেল মার্কেটিং এ্যাপ্রোচ, এর মধ্যে কিছু চ্যানেল অন্য চ্যানেল থেকে ভালো পারফর্ম করবে।
যেমন, ট্র্যাফিক সোর্স এবং ডিভাইসের উপর নির্ভর করে কনভার্শন রেট ভিন্ন হতে পারেঃ
- ডিভাইসের উপর নির্ভর করে গড় ইকমার্স কনভার্শন রেট হচ্ছে – ডেস্কটপ ৩.০%, স্মার্টফোন ১.৬% (যদিও ৫৮% ইউজার কিন্তু আসে মোবাইল থেকে) [সোর্সঃ কন্টেন্টস্কয়ার ]
- ট্র্যাফিক সোর্সের উপর নির্ভর করে গড় ইকমার্স কনভার্শন রেট হচ্ছে – রেফারেল ৫.৪%, ইমেইল ৫.৩%, ডিরেক্ট ২.২%, অর্গানিক ২.১%, ফেসবুক ০.৯%, পেইড সার্চ ১.৪%, সোশ্যাল ০.৭%
কি কিছু বুঝতে পারছেন?
আপনি যদি উপরের এই পরিসংখ্যান সঠিকভাবে উপলদ্ধি করতে পারেন তাহলে আপনার ইকমার্স বিজনেসের জন্য সঠিক মার্কেটিং স্ট্রাটেজি সেট করা অনেক সহজ এবং ইফেক্টিভ হবে।
নোটঃ একটা কথা সবসময় মনে রাখবেন, যে বিজনেসে আবেগ নয় ক্যাল্কুলেশন করতে হয়। সুতরাং, সবসময় ডেটার সঠিক ব্যবহার করে যদি আপনি আপনার বিজনেস এগিয়ে নিতে পারেন তাহলে জয় আপনারই।
১। সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন (এসইও)
ফ্রিতে টার্গেটেড ট্র্যাফিক পাওয়ার জন্য সবচেয়ে সেরা মাধ্যম হচ্ছে এসইও (যদিও এর জন্য লং টার্ম স্ট্রাটেজির দরকার পরে)।
কিন্তু আপনি যদি আপনার ইকমার্স বিজনেস বা অন্য যেকোন অনলাইন বিজনেস খুবই অল্প খরচে মার্কেটিং করে আপনার সার্ভিস বা পণ্যের অধিক সেলস পেতে চান, তাহলে এসইও এর বিকল্প নেই।
এজন্য আপনার ইকমার্স সাইটকে খুবই ভালোভাবে এসইও অপ্টিমাইজ করতে হবে (বিশেষ করে টেকনিক্যাল এসইও) এবং সঠিক কন্টেন্ট মার্কেটিং স্ট্রাটেজি ফলো করতে হবে।
টেকনিক্যাল এসইও এর মধ্যে – মোবাইল অপ্টিমাজেশন, লিংক স্ট্রাকচার, ইন্টারনাল লিংকিং, ওয়েবসাইট স্পিড, কিওয়ার্ড অপ্টিমাইজেশন সহ আরও অনেক কিছু।
টেকনিক্যাল এসইও এর পাশাপাশি কোয়ালিটি কন্টেন্ট অনেক বড় একটা ভূমিকা রাখে ইকমার্স ওয়েবসাইটে টার্গেটেড ভিজিটর টানতে।
এজন্য কপি কন্টেন্ট এর পরিবর্তে আপনার প্রোডাক্ট পেজ, ক্যাটেগরি পেজ এবং হোম পেজে খুবই ভালো মানের কন্টেন্ট ব্যবহার করতে হবে।
আরও ভালো হয় যদি সেই কন্টেন্ট আপনি সারফার-এসইও টুলস দিয়ে সঠিকভাবে অপ্টিমাইজ করে নিতে পারেন।
শুধু একবার পাবলিশ করে বসে না থেকে নিয়মিত আপনার কন্টেন্ট, ওয়েবসাইট আপডেট রাখুন কারণ গুগোল মামা আপডেটেড কন্টেন্ট বেশি পছন্দ করে।
সবশেষে, আপনার ওয়েবসাইট এর এসইও অডিট করে দেখে নিবেন যে, সকল প্যারামিটার সঠিকভাবে অপ্টিমাইজ আছে কিনা।
২। পেইড এ্যাডভার্টাইজিং
যেহেতু এসইও একটা লং টার্ম প্রোসেস তাই বিজনেস শুরু করে এসইও থেকে ট্র্যাফিক আসার অপেক্ষা না করে, শুরুতে আপনাকে পেইড এডভার্টাইজিং এর মাধ্যমে আপনার ইকমার্স ওয়েবসাইট এ ট্র্যাফিক এনে বিক্রয় শুরু করতে হবে।
এজন্য আপনি ফেসবুক এ্যাডস এবং গুগোল এ্যাডস কে প্রাধান্য দিতে পারেন আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে।
যদিও আমাদের দেশের ইকমার্সের ম্যাক্সিমাম সেলস জেনারেইট হয় ফেসবুক এ্যাডস থেকে, কিন্তু গুগোল এ্যাডসও বর্তমানে অনেক ভালো করছে।
গুগোল এ্যাডসের মধ্যে আপনি – ইউটিউব ভিডিও এ্যাডস ব্যবহার করে আপনার বিজনেসের ভালো ব্রান্ডিং এবং কাস্টোমার ট্রাস্ট গেইন করতে পারবেন।
আবার গুগোল সার্চ এ্যাডস ব্যবহার করে আপনি আপনার নিশ রিলেটেড পণ্য বা সার্ভিস যারা গুগোলে সার্চ করে তাদের কাছে পৌছাতে পারবেন।
অবশেষে, গুগোলের ডিসপ্লে নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে আপনার ওয়েবসাইট ভিজিট করা টার্গেটেড ট্র্যাফিককে ফলো করে রিটার্গেটিং মার্কেটিং চালিয়ে অনেক ভালো সেলস জেনারেইট করতে পারবেন।
এছাড়াও ফেসবুক এ্যাডসের মাধ্যমে আপনি আপনার টার্গেটেড ট্র্যাফিককে আপনার ওয়েবসাইটে নিয়ে এসে তাকে আপনার সাইটে পিক্সেল ব্যবহার করে রিটার্গেট মার্কেটিং করতে পারবেন।
বাংলাদেশে অনলাইন সেলসের জন্য আমার প্রথম পছন্দ ফেসবুক এ্যাডস, কারণ এখানে সঠিক স্ট্রাটেজি ফলো করে মার্কেটিং করতে পারলে আপনি অনেক ভালো কনভার্শন পাবেন, যা অন্য কোন পেইড এ্যাডভার্টাইজিং প্ল্যাটফর্মে সম্ভব না।
৩। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
বর্তমানে আমরা একটা দিনও পার করিনা ফেসবুক, টুইটার বা ইন্সটাগ্রাম ব্যবহার না করে, তাহলে আপনার ইকমার্স স্টোর কেন পিছিয়ে থাকবে।
বরং আপনি এইসব সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম গুলোর সুবিধা নিয়ে আপনার বিজনেসের ফলোয়ার বাড়াতে পারবেন, আপনার কাস্টোমারে সাথে ডিরেক্ট এঙ্গেইজমেন্ট করতে পারবেন।
এছাড়াও আপনার বিজনেসের রেপুটেশন ম্যানেজমেন্ট করতে পারবেন এবং আপনার টার্গেটেড কাস্টোমারের কাছে খুবই সহজে মার্কেটিং করতে পারবেন তাদের ইন্টারেস্টের উপর ভিত্তি করে।
এমনকি আপনি ক্রিয়েটিভ (ভিজ্যুয়াল ডেটা সমৃদ্ধ) কন্টেন্ট পোস্ট করে আপনার ব্রান্ডকে অর্গানিক্যালি গ্রো করতে পারবেন এবং তাদের কাছে আপনার নতুন পণ্য বা সার্ভিসের আপডেট পেজে শেয়ার করে আপনার ব্রান্ডকে আপনার ইউজারের সাথে কানেক্টেড রাখতে পারবেন।
যেহেতু আমাদের দেশের প্রায় প্রত্যেকেই ফেসবুক ব্যবহার করে সেহেতু আপনার বিজনেসের ফেসবুকে ব্রান্ড ইমেজ তৈরি করার কোন বিকল্প নেই।
ফেসবুকের পেইড এ্যাডসের মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন ভিডিও বা ইমেজ এর মাধ্যমে একদম স্পেসিফিক অডিয়েন্সের কাছে পৌছাতে পারবেন তাদের ইন্টারেস্ট এর উপর নির্ভর করে।
এছাড়াও আপনি আপনার ইকমার্স শপের প্রোডাক্টের ক্রেতার ধরণের উপর নির্ভর করে নির্দিস্ট এরিয়ায়, নির্দিস্ট বয়সের কিংবা নির্দিস্ট আয়ের মানুষকে টার্গেট করে এ্যাড দিতে পারবেন।
ফেসবুক এতটাই কাস্টোমার-কেন্দ্রিক প্ল্যাটফর্ম যে তারা খুবই ভালোভাবে তাদের ইউজারদের বিহেভিরিয়্যাল প্যাটার্ন ফলো করে এবং সে অনুযায়ী তারা আপনার এ্যাডস তাদের কাছে প্রদর্শন করে।
বিষয়টা ঠিক এমন যে আপনি এই গরম থেকে বাঁচার জন্য একটা এসি কেনার কথা ভাবছেন আর ঠিক সেই মুহুর্তে আপনার কাছে একটা এসির এ্যাড চলে আসলো।
এছাড়াও আপনি ফেসবুকে আপনার বিজনেসের জন্য একটা গ্রুপ বা কমিউনিটি তৈরি করতে পারবেন। যার মাধ্যমে পরবর্তিতে আপনি ফ্রিতে তাদের কাছে আপনার লেটেস্ট পণ্য গুলোর আপডেট দিতে পারবেন।
আবার আপনি হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার ব্যবহার করে আপনার কাস্টোমারের সাথে কনভার্শন করতে পারবেন, এরফলে তাদের ট্রাস্ট অনেক বেশি বেড়ে যাবে।
তাই, যদি এক কথায় প্রকাশ করতে চাই তাহলে বলবো যে আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে অনলাইনে বিক্রি বাড়ানোর জন্য সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং হচ্ছে একটি দুর্দান্ত উপায়।
৪। ইমেইল মার্কেটিং
আমাদের দেশে ইমেইল মার্কেটিং এত বেশি জনপ্রিয় না হলেও, শুধু দেশের গন্ডিটা পার হলেই বুঝতে পারবেন ইমেইল মার্কেটিং এর জনপ্রিয়তা কত বেশি।
আমি পুর্বেই আপনাদের স্ট্যাটিসটিক্স সহ দেখিয়েছি যে অনলাইন সেলসে রেফারেলের পরেই ২য় অবস্থান দখল করে আছে ইমেইল মার্কেটিং।
তাই ইমেইল মার্কেটিং থেকে নিজেকে দূরে সরে না রেখে এখন থেকে শুরু করুন আপনার ব্রান্ডের ইমেইল মার্কেটিং। এরজন্য খুব বেশি যে আপনাকে খরচ করতে হবে তা কিন্তু নয়।
আপনি শুরুতে বিভিন্ন ইমেইল মার্কেটিং প্ল্যাটফর্মের ফ্রি প্ল্যান দিয়ে শুরু করতে পারবেন, পরবর্তিতে যখন আপনার সাবস্ক্রাইবার বেড়ে যাবে তখন আপনি পেইড প্ল্যানে গেলেই হবে।
আপনি ইমেল মার্কেটিং সফ্টওয়্যার ব্যবহার করে আপনার পটেনশিয়াল কাস্টোমারের সাথে যুক্ত হওয়ার পাশাপাশি আপনার বর্তমান গ্রাহকদের কাছে আপ-সেলিং করতে পারবেন।
ই-কমার্স বিজনেসে ইমেল মার্কেটিং এর অনেক কৌশল রয়েছে যার সঠিক ব্যবহার আপনার বিজনেসকে সফল করে তুলবে।
আপনি অটোমেশনের মাধ্যমে ওয়েলকাম ইমেইলের পাশাপাশি যে কাস্টোমাররা আপনার পণ্য কার্টে এ্যাড করে বা চেকআউট পেজ থেকে ফিরে এসেছিল তাদেরকে রিমাইন্ডার দিতে পারবেন, এর ফলে সেলস আরও কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।
অটোমেইটেড ইমেইল ছাড়াও আপনি আপনার সাবস্ক্রাবারদের নিউজলেটার, নতুন ব্লগ পোস্ট বা ইউটিউব ভিডিও, নতুন পণ্যের আপডেট, প্রোমোশনাল অফার ইত্যাদি প্রচার করতে পারবেন।
যার ফলে আপনার ইমেইল সাবস্ক্রাইবারদের মধ্যে আপনার প্রতি ট্রাস্ট বৃদ্ধি পাবে এবং তারা আপনার নিয়মিত কাস্টোমারে পরিণত হবে।
আর আপনি খুব ভালো করেই জানেন যে, একটা বিজনেসের সফলতার পিছনে রিটার্নিং কাস্টোমারে অবদান কত বেশি থাকে।
তাই, আমি আপনাদের বলবো যে, বিজনেসের শুরু থেকেই ইমেইল মার্কেটিং এর জন্য আপনার টার্গেটেড ইউজারদের লীড কালেক্ট করে, নিয়মিত সেই সব ইউজারদের কাছে ইমেইল মার্কেটিং করুন।
তাহলে দেখবেন, খুবই অল্প সময়ে আপনি আপনার বিজনেসের একটা ভালো অবস্থান তৈরি করতে পারবেন।
৫। এফিলিয়েট মার্কেটিং
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, বর্তমান দুনিয়ায় অনলাইনে যত কেনাকাটা হয় তার সবথেকে বড় সোর্স হচ্ছে রেফারেল মার্কেটিং যাকে আমরা এফিলিয়েট মার্কেটিং নামে চিনে থাকি।
এফিলিয়েট মার্কেটিং হল আপনার পণ্যের প্রচার করার জন্য আপনার নিশের ইনফ্লুয়েন্সার বা অন্যান্য ওয়েবসাইটের সাথে সংযোগ তৈরি করে তাদের রেফারে আপনার পণ্য বিক্রি করা।
এর বিনিময়ে যারা (এফিলিয়েট মার্কেটার) রেফার করে আপনার প্রোডাক্ট সেল করবে তাদেরকে একটা নির্দিস্ট হারে কমিশন দেয়া।
এজন্য এফিলিয়েট মার্কেটাররা তাদের ভিডিও বা কন্টেন্ট থেকে আপনার বিজনেসকে প্রোমোট করবে। আর যারা ওয়েবসাইট ব্যবহার করে এফিলিয়েট মার্কেটিং করবে তারা ইমেজ ব্যানার বা টেক্সট লিংক এর মাধ্যমে প্রোমোট করবে।
এরপর যখন তাদের লিংক থেকে সেলস আসবে তখন আপনি আপনার লাভের একটা অংশ এফিলিয়েট কমিশন হিসেবে তাকে দিবেন।
এরফলে আপনারা দুইজনেই উইনার হবেন, কারণ – আপনি আপনার লাভের অংশ থেকে প্রোফিট শেয়ার করলেন (সো, আপনার কোন লস নেই)। তেমনি এফিলিয়েট মার্কেটারও আপনার পণ্যের প্রচার করে বাড়তি আয় করতে পারলো।
কারণ, আপনি যখন অন্য কোন মাধ্যম ব্যবহার করে পেইড মার্কেটিং করবেন তখন সেই ক্যাম্পেইন থেকে আপনি লাভও করতে পারেন আবার লসও করতে পারেন।
কিন্তু এফিলিয়েট মার্কেটিং এ আপনার লস বলতে কিছু নেই, কারণ আপনি প্রোডাক্ট সেল করে তারপর সেই প্রোডাক্ট এর প্রোফিট থেকে একটা অংশ শেয়ার করবেন।
যা আপনি পুর্বেই আপনার প্রোডাক্ট প্রাইজিং করার সময়ে মার্কেটিং কস্ট হিসেবে এ্যাড করে নিয়েছিলেন।
শুধু তাই না, যখন কোন ইনফ্লুয়েন্সার বা ব্লগার আপনার বিজনেসের প্রোমোশন করবে তখন আপনার বিজনেসের ট্রাস্ট বৃদ্ধি পাবে।
আর মানুষ কোন কিছু কেনাকাটার ক্ষেত্রে ট্রাষ্টকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে।
আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে যে, আপনি যদি আপনার বিজনেসে এই এফিলিয়েট মার্কেটিং (এমএলএম বা মাল্টি-লেভেল-মার্কেটিং কিন্তু না) এর সঠিক ব্যবহার করতে পারেন তাহলে আপনি রিয়েল উইনার।
৬। ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং
আপনি যদি আমার গত ৩টা মার্কেটিং স্ট্রাটেজি রিলেটেড পোস্ট গুলো (ডিজিটাল মার্কেটিং স্ট্রাটেজি এবং কন্টেন্ট মার্কেটিং স্ট্রাটেজি) পড়ে থাকেন তাহলে দেখবেন যে সবখানেই আমি এই ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং নিয়ে কথা বলেছি।
কারণ, এই ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং হচ্ছে আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যত মার্কেটিং এর সফলতায় অনেক বড় একটা ভুমিকা পালন করবে।
এজন্যই আমি সব সময় বলি যে, এই যুগটা হচ্ছে ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং এর যুগ।
অনলাইনে কেনাকাটা করার সময়, ক্রেতারা প্রোডাক্টি সম্পর্কে জানতে এবং সেই প্রোডাক্টি কিনতে অন্যদের (বিশেষ করে ইনফ্লুয়েন্সারদের) মতামতের উপর খুব নির্ভর করে।
তারা অনলাইনে ওই প্রোডাক্টের রিভিউ পড়ে, ইনফ্লুয়েন্সারদের সাজেশন দেখে এমনকি অনেকে তাদেরকে জিজ্ঞেস করে যে কোন ব্রান্ডের প্রোডাক্ট সে কিনবে।
তাই, আপনি যদি আপনার নিশ রিলেটেড ইনফ্লুয়েন্সারদের সাথে পার্টনারশিপ করতে পারেন তাহলে আপনি তাদের মাধ্যমে ওই ইউজারদের প্রভাবিত করার মাধ্যমে ব্যাপক সেলস জেনারেইট করতে পারবেন।
এরজন্য আপনাকে নির্দিস্ট এ্যামাউন্টের স্পন্সর ফি প্রদান করতে হবে সেই ইনফ্লুয়েন্সারকে, বিষয়টা হচ্ছে যতবেশি ফলোয়ার ততবেশি স্পন্সর ফি তারা চার্জ করে।
এর বিনিময়ে তারা আপনার প্রোডাক্ট এবং সার্ভিসকে অনলাইনে প্রোমোট করবে তাদের ব্লগ বা ফেসবুক, ইউটিউব বা ইন্সটাগ্রাম এ্যাকাউন্ট থেকে।
যা শুধু আপনার সেলস না, আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিস সম্পর্কে কাস্টোমারকে সচেতন করার পাশাপাশি আপনার ব্রান্ড এর ট্রাস্ট বৃদ্ধি করবে।
৭। রিটার্গেটিং মার্কেটিং
এই মার্কেটিং মেথড পেইড এ্যাডভার্টাইজিং এর জন্য পার্ফেক্ট।
রিটার্গেটিং মার্কেটিং মূলত যে ইউজার একবার আপনার ওয়েবসাইট ভিজিট করবে সে আপনার পিক্সেলে পড়ে যাবে।
এরফলে ফেসবুকের ক্ষেত্রে আপনি সেই ইউজারকে টার্গেট করে রিটার্গেট মার্কেটিং করলে সে বারবার আপনার এ্যাড দেখতে পারবে।
অপরদিকে গুগোলের ক্ষেত্রে সে অনলাইনে যে ওয়েবসাইট এই ভিজিট করুক না কেন, সে আপনার এ্যাড সেই ওয়েবসাইটে দেখতে পারবে (যদি সেই ওয়েবসাইটটি GDN বা গুগোল ডিসপ্লে নেটওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত হয়)।
যখন কোন ভিজিটর আপনার ইকমার্স সাইটে আসে, তখন গুগোল বা ফেসবুক তাদের ব্রাউজারে একটি পিক্সেল সেট করে দেয় যার জন্য তারা আপনার বিজ্ঞাপন দেখাতে পারে যখন তারা অনলাইনে ব্রাউজ করে।
এই এ্যাডগুলো সাধারণত ইম্প্রেশন এর ভিত্তিতে চালানো হয় এবং এটি ডিজিটাল মার্কেটিং একটি দুর্দান্ত কৌশল, যার মাধ্যমে আপনি আপনার পটেনশিয়াল কাস্টোমারকে বারবার রিমাইন্ডার দিতে পারেন আপনার পণ্য বা সার্ভিস সম্পর্কে।
কারণ, আপনি জানেন যে ইতিমধ্যে তারা আপনার পণ্য বা সার্ভিস সম্পর্কে আগ্রহ দেখিয়েছে।
আমি আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, পেইড এ্যাডস থেকে আমি যদি ৮০ টাকা খরচ করে জেনারেল ইউজারের কাছে ১ সেল করি, সেখানে আমি ২০টাকার রিটার্গেট মার্কেটিং এর মাধ্যমে ২টা সেলস করতে পারি।
আর এ কারণেই, রিটার্গেটিং মার্কেটিং এর এত ডিমান্ড।
আপনি যদি শুধু ফেসবুকে বুস্টিং করে সেল করে থাকেন, তাহলে আমি বলবো আপনি বিশাল একটা টার্গেটেড কাস্টোমারকে হাত ছাড়া করছেন যারা আপনার বিজনেসকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে।
শেষকথা …
আগের চেয়ে বর্তমানে অনলাইন শপ থেকে অনেক আয় করার সুযোগ আছে৷
এজন্য আপনাকে আপনার মার্কেটিং স্ট্রাটেজি সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে হবে এবং সেলস বা কনভার্শন ফানেলকে ভালোভাবে অপ্টিমাইজ করতে হবে। যেন কনভার্শন বহুগুণ বাড়ানো যায়।
অনলাইন মার্কেটিং এখন আর কোন রহস্যের মধ্যে আবৃত নয়, এটি একটি প্রতিষ্ঠিত ফ্যাক্টস।
আপনি যদি উপরে বর্নিত ইকমার্স মার্কেটিং স্ট্রাটেজি সমূহকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেন ROI (রিটার্ন অব ইনভেস্টমেন্ট) মনিটরিং এর মাধ্যমে তাহলে আপনি আরও ভালোভাবে আপনার মার্কেটিংকে স্কেল করতে পারবেন।
যার মাধ্যমে আরও বেশি ইউজারের কাছে পৌছাতে পারবেন এবং আমি বিশ্বাস করি যে, আপনি সামনে অধিক পরিমান সেলস জেনারেইটের মাধ্যমে অনেক আয় করতে পারবেন।
Related Posts
Comments (2)
Leave a comment Cancel reply
This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.
Shumon
May 7, 2023ই-কমার্স মার্কেটিং এর উপর অনেক সুন্দর একটা গাইডলাইন, আমার মত অনলাইন শপ যাদের আছে তাদের জন্য বেশ উপকারী পোস্টটি। অনেক কিছু জানতে পারলাম। ধন্যবাদ রিকো ভাইকে।
Reko Ashikur Rahman
May 8, 2023ধন্যবাদ, আপনার মূল্যবান মতামত দেবার জন্য।